ব্রেকিং
বিশেষ সংবাদদাতা:
প্রকাশ: ১৭:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি, এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সামনেই স্ত্রী সন্তানদের পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার ভাই বিএনপি নেতা মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরের বাসভবনে নাছির চৌধুরীর সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দিরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (নং-৮০৯, তারিখ-১৮ এপ্রিল) করেছেন নাছির চৌধুরীর ২য় স্ত্রী পারভিন আক্তার। এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হীন উদ্দেশ্যেই তাদেরকে নাছির উদ্দিন চৌধুরী থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত করছেন তার ভাইয়েরা।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে বারোটার দিকে খাবার টেবিলে বসা অবস্থায় দিরাই উপজেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মাসুক চৌধুরী ও তার ভাই মিলন চৌধুরী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এসময় প্রতিবাদ করলে প্রথমে কিল, ঘুষি পরে লাঠি, রড দিয়ে এলাপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এতে রক্তাক্ত আহত হন নাছির চৌধুরীর স্ত্রী পারভিন আক্তার ও মেয়ে নাজিয়া চৌধুরী (২০) ও নাদিয়া চৌধুরী (১৯)।
এতে উল্লখ করা হয়, দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাছির চৌধুরী অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তিনি ভাইদের সঙ্গে দিরাইয়ের আনোয়ারপুরস্থ বাসায় থাকেন। নাছির চৌধুরীকে দেখতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে দিরাইয়ের বাসায় আসেন পারভিন আক্তার। তারপরই এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে।
এতে শোনা যায়, পারভিন আক্তারকে তালাকপ্রাপ্ত দাবি করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতেন বলেন মাসুক চৌধুরী। প্রতিউত্তরে পারভিন আক্তার দাবি করেন তার ডিভোর্স হয়নি। তিনি নাছির চৌধুরীর দুই সন্তানের জননী। সন্তানরা তার অসুস্হ বাবার কাছে এসেছে। নাছির চৌধুরীর কাছে তারা আসবেনই বলেন তিনি। এসময় পারিভনকে বলতে শোনা যায়, আপনারা গায়ে হাত তোলবেন না। তখন মাসুক চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনে তাই করবো।
একপর্যায়ে অকথ্য গালিগালাজ ও মারধর এবং কান্নার শব্দ শোনা যায়। নাছির চৌধুরীর দুই মেয়েকে তখন বলতে শোনা যায়, “বাবা ওরা মারতেছে। রক্ত বের করে ফেলছে। আমরা আর তোমার কাছে আসব না। জীবনেও আসব না। তোমার সামনে আমাদের মেরেছে”।
এসময় নাছির চৌধুরী বলেন, আমি দেখেছি। আমি দেখেছি। তখন নাছির চৌধুরীর ছোট মেয়ে নাদিয়া চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, তুমি থাকো তোমার ভাইদের সঙ্গে। আমরা আর আসব না।
এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক এমপি নাছির চৌধুরী এসময় বলেন, আমার ওপর রাগ করে লাভ নেই মা। নাজিয়াকে ডাকো। যেতে দিও না।
নাদিয়া চৌধুরী তখনও কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, তোমার সামনে আমাদের মারছে। জবাবে নাছির চৌধুরী বলেন, আমি হাঁটতে পারি না। চলাফেরা করতে পারিনা। তোমরা যেও না। তখন নাদিয়া চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, ওরা আমাকে খুন করবে। মেরে ফেলবে। হাত ছাড়ো বাবা। যেতে দাও। তখনও চিৎকার শোনা যাচ্ছিলো নাছির চৌধুরীর দুই ভাই (স্টেফ ব্রাদার) মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর।
উল্লেখ, ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে নিঃসন্তান নাছির চৌধুরী ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রী পারভিন আক্তারের গর্ভে জন্ম হয় দুই কন্যা সন্তান নাজিয়া ও নাদিয়ার। কয়েক বছর আগে নাছির চৌধুরীর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। এরমধ্যেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন নাছির চৌধুরী। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে তাকে দেখতে দিরাইয়ে ছুটে আসেন স্ত্রী পারভিন আক্তার ও এই দম্পতির দুই সন্তান নাজিয়া এবং নাদিয়া। কিন্তু কোনোভাবেই নাছির চৌধুরীর স্ত্রী সন্তানদের ওই বাসায় থাকতে দিতে চান না নাছির চৌধুরীর ভাইয়েরা।
নাছির উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী পারভিন আক্তার জিডির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমাকে ও আমার মেয়েদের মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে মাসুক ও মিলন। তারা যে ব্যবহার করেছে, তা ভাষার প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাদের ভয়ে আমি এই মুহুর্তে দিরাইয়ে আত্মগোপন আছি।
এ বিষয়ে দিরাই থানার ওসি মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, জিডি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্হা নেয়া হবে। অন্যদিকে, এ বিষয়ে মাসুক চৌধুরীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।