ব্রেকিং
খালেদ আহমদ, সিলেট*
প্রকাশ: ১৭:৪৬, ২৪ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২০:১৯, ২৪ জুন ২০২৫
মৎস-পাথর-ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ। এই প্রাণসম্পদের মধ্যে আছে বাউল সংস্কৃতির চর্চা। সম্পদ ও সংস্কৃতির পরিচয় রাজনীতিও প্রভাবিত। সব মিলিয়ে ভোটের হাওয়ায় সত্যিোকারের উৎসব হয় সুনামগঞ্জে। কিন্তু বিগত দিনে ভোটাধিকার হরণে স্থবিরতা ছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আবারও ভোট উৎসব দরজায় কড়া নাড়ছে।
পৌরাণিক যুগে প্রাচীন কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের লাউড় পর্বতে কামরূপ রাজ্যের উপরাজধানী স্থাপন করা হয়েছিল।
হাওড় বাওড় বেষ্টিত খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম উৎস ভূমি সুনামগঞ্জ ১৮৭৭ সালে মহকুমা প্রতিষ্ঠত হয়। প্রাচীন এই মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রুপান্তরিত হয়। এ জেলায় মনিপুরী, খাসিয়া, হাজং, গারো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
কৃষিই এই জেলার অন্যতম অর্থনীতির চাবিকাটি। একমাত্র বোরো ধানের ওপরই নির্ভশীল এ জেলার অধিকাংশ মানুষ। বছরের ছয় মাস কর্ম ব্যস্ত আর ছয় মাস ভাটিয়ালি ও আর বাওয়ালি গান ঘেয়ে অলস সময় কাটায় এ জেলার মানুষ। কর্ম সংস্থানের তেমন কোনো সুযোগ তাকে না তখন। উন্নয়ন বঞ্চিত এই জেলার অনন্য অবদান রয়েছে দেশের খাদ্য ভান্ডারে।
জুলাই বিপ্লবের পর চিত্র পাল্টে গেছে। গণহত্যাকারী দলটির নাম আর কেউ মুখে নিতে চান না। সুবর্ণসুযোগ তৈরি হয়েছে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থিদের জন্য। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠতে চান বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ।
নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত পাঁচটি আসনে ব্যাপক তৎপর বিএনপি ও জামায়াত নেতারা। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তারা। তবে ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য ইসলামী দল এবং ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতাকর্মীরা এখনো সরব হননি। নির্বাচনি মাঠে নেই তাদের কোনো কার্যক্রম।
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর)
টাঙ্গুয়ার ও শনির হাওড় সহ একাধিক বড় বড় হাওড়ের বিশাল জলরাশি ৪টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার বৃহত্তম আসন সুনামগঞ্জ-১। এটি মূলত জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি অধ্যুষিত। এখানে ভোটের মাঠে মূল লড়াই হবে তাদের মধ্যেই। আসনটি দখলে নিতে এবার কাজ করছেন বিএনপির অন্তত সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী।
তারা হলেন, ধর্মপাশা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবদুল মোতালিব খান, তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আনিসুল হক, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি মরহুম নজির হোসেনের স্ত্রী সাবেক ব্যাংকার সালমা নজির, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন।
ভোটের মাঠে নতুন প্রার্থী এই আসনের একাধিকবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম নজির হোসেনের স্ত্রী ব্যাংকার সালমা নজির । তিনি তাঁর স্বামীর স্বপ্ন পূরণে এবার মাঠে নেমেছেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন এই অঞ্চলকে ধানের শীষের দুর্গে পরিণত করেছিলেন। তার অবর্তমানে এলাকাবাসীর চাওয়া থেকে আমি মাঠে তৎপর। আশা করছি, দলও আমার প্রতি আস্থা রাখবে।
অপরদিকে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছের জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান। দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর থেকে তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন। যাচ্ছেন হাওর জনপদের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা)
হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এই আসনে দশকের পর দশক কব্জা করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। মৃত্যুর পর নামকাওয়াস্তে এলাকাটি দখলে রাখেন তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর তিনিও পালিয়ে যান। এবার জনগণের প্রার্থীর হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা। দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী ’দাদা ও বউদি’কে নিরংকোশ সমর্থন জানালেন এর প্রতিদান পায়নি রাজনীতির উর্বর মাঠ হিসেবে খ্যাত দিরাই-শাল্লাবাসী। উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়া এই অঞ্চল শুধু দাদাই শাসন করেছেন। কিন্তু এর প্রতিদান দিয়েছেন খুব কম।
এই আসনে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে ভুগছেন। তার পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চালাচ্ছেন প্রচার। ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হওয়ায় ও পরবর্তীতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি অবসরের পর আবার রাজনীতির মাঠে নামতে চাচ্ছেন। এছাড়া রয়েছেন তরুণ রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্য প্রবাসী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল।
তবে এই আসনে বেশ সাড়া ফেলেছেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। জামায়াত তাকে মনোনয়ন দিলেও সৃজনশীলতা ও জনসেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন। জনসংযোগের পাশাপাশি ব্যকিগত উদ্যোগে কিশোর-তরুণ-যুবকদের খেলাধুলা-বিনোদনের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে কুড়াচ্ছেন প্রশংসা।
এদিকে হিন্দু ভোটারদের পুঁজি করতে কৌশলগতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা অনিক রায়কে প্রার্থী করার কথা ভাবছে দলটি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছেন অনিক।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ)
প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে ভিভিআইপি প্রার্থীরা এমপি হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এই আসনে এমপি ছিলেন। কিন্তু পরে যোগ্য কোনো রাজনৈতিক উত্তরসূরি দলীয় নেতাকর্মীরা খোঁজে পাননি। ফলে এই আসনে দেশি-প্রবাসী মনোনয়নে আগ্রহীদের সংখ্য সবসময়ে বেশি থাকে। এই আসনে জাতীয়তাবাদের শক্ত অবস্থান থাকলেও বিএনপি কখনো এই আসন থেকে দলীয় প্রার্থী দিয়ে জয়লাভ করতে পারেনি। আসনটিতে কওমি ঘরনার অসংখ্য মাদরাসা এবং বিখ্যাত আলেম-ওলামার কারণে ইসলামপন্থিদের ভালো একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে।
২০০৫ সালের একটি উপ-নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জমিয়ত নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী বিজয় হন। তবে ২০২৪ সালের শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে শাহীনুর পাশাও ’আমি-ডামি’ খ্যাত নির্বাচনে কিংস পার্টি ’তৃণমূল বিএনপি’ থেকে নির্বাচন করে জামানত হারান। এ কারণে তিনি জমিয়ত থেকে বহিষ্কৃত হন। বর্তমানে মাওলানা মামুনুল হক নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসে যোগ দিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাহীনুর পাশা। বারবার ডিকবাজির কারণে শাহীনুর পাশাকে নিয়ে তৃণমূলে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
এই আসনটি আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে আওয়ামী দলীয় কোনো প্রার্থী মাঠে নেই। সাবেক এমপি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী বর্তমানে নীরবে দিন কাটাচ্ছেন। নির্বাচন করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে তাঁর অনুসারীরা জানিয়েছেন।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, জমিয়তের অনেক প্রার্থীই বিভিন্ন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তৃণমূলেও যোগাযোগ রাখছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আলোচিত প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক ছাত্রদল নেতা এম কয়ছর আহমদ। জগন্নাথপুরের অধিবাসী প্রবাসী এই নেতা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যুক্তরাজ্যে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখে দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি। ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রচার, প্রচারণা, সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সাথে রয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এলাকার দুই নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও সাবেক যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আনছার উদ্দিন। তাদেরকে নিয়ে তিনি ভোটের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ ও তৃণমূলে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন। তিনি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের অধিবাসি। দীর্ঘদিন থেকে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরে তিনি আইন পেশা ও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করছেন।
নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন প্রবীন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বৃহত্তর সিলেট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান। তিনি নির্বাচনী এলাকা একজন পরিচিত ব্যক্তি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জগন্নাথপুর এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জে গণসংযোগ, ব্যানার, ফেস্টুন সাটিয়ে প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন।
এছাড়া এই আসন থেকে আরো যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের মধ্যে রয়েছেন-মেজর (অবঃ) সৈয়দ আলী আশফাক শামী। তিনি ভোটের মাঠে নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী। শামী সরাসরি বিএনপির সাথে জড়িত নেই। তাঁর পিতা কর্ণেল (অবঃ) সৈয়দ আলী আহমেদ সুনামগঞ্জে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।
আরো বিএনপির মনোনয়ন আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ সাত্তার ও যুক্তরাজ্যের বিএনপির নেতা এম এ কাহার।
জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে অ্যাডভোকেট ইয়াসীন খান এপিপি। তিনি দলীয় সিগন্যাল পেয়ে মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন।
অপরদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সৈয়দ তালহা আলম ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। তার দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোটে আছে। এছাড়া জমিয়ত যুক্তরাজ্য শাখার সহ-সভাপতি সৈয়দ তামিম আহমদ ও হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরীও নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর)
জেলা সদর ও সুরমা নদীর ওপারের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে রয়েছেন, হাছন রাজার বংশধর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও আহবায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল মনসুর শওকত, সাবেক হুইপ মরহুম ফজলুল হক আসপিয়ার পুত্র জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আবিদুল হক ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী সোহেল।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে জেলা শাখার নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শামস উদ্দিনকে। তিনি দলীয় প্রার্থী হওয়ায় পর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে মতবিনিময়, গণসংযোগ করেছেন। হাটে বাজারে তার কর্মীরা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার)
শিল্পনগরী ছাতক ও সীমান্ত ঘেঁষা দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। এবার জনগণের সেবার সুযোগ চাইছেন বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতা।
তারা হলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক তুখোর ছাত্র নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান। তারা উভয়ই ছাতকের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে কলিম ইতোপূর্বে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর মিজানুর ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিলেন।
বিএনপির ঘাঁটিতে এবার থাবা দিতে চায় জামায়াত। ৫ আগস্টের পর সাংগঠনিক কর্মসূচি ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে দলটি। ইতোমধ্যে সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে।
জামায়াতের প্রার্থী এবার ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানী। তিনিও ছাতকের বাসিন্দা। বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের (মামুনুল হক) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন খেলাফত শ্রমিক মজলিশের উচ্চতর পরিষদের সদস্য মাওলানা সাদিক সালিম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন দলটির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আশরাফী। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন ছাতক জাবা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
তবে এই আসনে গণ-অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি ও এনসিপির কোনো নেতা মাঠে নেই। এমনকি তাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না।
* (সূত্র: দৈনিক আমার দেশ। তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মো: জসিম উদ্দিন)।