ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৭:১৪, ৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১১, ৫ জুলাই ২০২৫
* ছাত্রলীগের ডেভিলদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ করার প্রতিশোধে আমার উপর নির্যাতন: মিজান
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিমানবন্দর থানা ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম মিজানকে ’ছিনতাইকারী’ অপবাদ মাথা ন্যাড়া করে লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হওয়ার পর বহিস্কার নিয়ে তোলপাড় চলছে।
মিজান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাই তাকে ছিনতাইকারী সাজিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছাড়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
মিজান নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার দাবী করে বলেছেন, আমার এলাকার ব্যাটারি চালিত এক রিকশা ড্রাইভারকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে নিয়ে পিস্তল ও চাকু ঠেকিয়ে আম্বরখানা সাহেদের কলোনিতে আমার উপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। এরপর কোনো তদন্ত ছাড়া, কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই প্রভাব কাটিয়ে বহিস্কার করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বহিস্কারের ঘটনাটি সঠিক উল্লেখ করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী জানান, কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না, প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকলেই চরিত্র সঠিক থাকবে, তা সঠিক নয়।
মিজান বলেন, রাজনৈতিক রেষারেষি এবং ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের ডেভিলদের নিয়ে খাসদবিরে নতুন আলাদা ইউনিট গঠনে প্রতিবাদ করায় আমি নির্যাতন ও অপবাদের শিকার হয়েছি। তিনি অভিযোগ করেন প্রভাবশালী মঞ্জুরুল করিম তুহিনের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় আমাকে শিক্ষা দিতে ইশতিয়াক রাজু, নাহিদ, নয়ন, আহাদ, আলামিন, মান্নাসহ ১০–১২ জন মিলে আমাকে অপহরণ করে মারধর করে। তারা আমার টাকা ও মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয় এবং আমাকে ছিনতাইকারী সাজিয়ে মাথা ন্যাড়া করে ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। তারা বলেন, ’তুই রাজনীতি করতে হলে তুহিন রাজুকে বাপ ডাকতে হবে’। তাদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে সেদিন রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, পিস্তল ঠেকিয়ে আমার কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না পেয়ে তারা আমার মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। পরে আমাকে কলোনির সামনে রাস্তায় ফেলে ওরা চলে যায়। আমি যদি ছিনতাইকারী হতাম তাহলে ছিনতাইয়ের শিকার যিনি হয়েছেন তিনিও অভিযোগ করতেন অথবা আমাকে পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতেন, কিন্তু তা করা হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের সহযোগি আহাদ এখন তাদের গ্রুপের সদস্য।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফছর খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কারের তথ্য জানানো হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের’ কথা উল্লেখ করা হলেও বহিষ্কারের সুনির্দিষ্ট কারণ হিসেবে ছিনতাইয়ের অভিযোগ বা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রসঙ্গ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে এই ঘটনাটি নিয়ে দলের ভেতরেই নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ এটিকে দলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন, শৃঙ্খলা রক্ষার আড়ালে প্রতিশোধের রাজনীতি।
বিভিন্ন সামাজিত মাধ্যমে বিভিন্নজন এনিয়ে মন্তব্য করছেন। এএসএম সায়েম নামের একজন্য মন্তব্য করেছেন রাজনীতির মার পেঁচ বোঝা বড় দায়। যে মিজান নিজের জীবন বাজি রেখে দলের জন্য সংগ্রাম করে গেল, গুলিবিদ্ধ হল আজ নোংরা গ্রুপিং এর স্বীকার হয়ে রাজনীতির মাঠে বলির “পাঠা”হয়ে গেলো।