ব্রেকিং
অনলাইন ডেস্ক:
প্রকাশ: ১৪:৫২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে বিএনপি। বর্তমান বাস্তবতায় প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপণে কঠোর মানদণ্ড অনুসরণের ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তারা জানিয়েছেন, গত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা, নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং অভিযোগ থাকা, না থাকার মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে তরুণ, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং বাদ পড়তে পারেন অনেক হেভিওয়েট ও বিতর্কিত নেতা।
ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করতে মাঠে কাজ করছে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একাধিক ‘গোয়েন্দা’ টিম। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের ফাইল তৈরি করছেন, যা তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্য দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করা হবে। বিষয়টি বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এবার কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
দলীয় নেতারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সহজ হবে না। তারেক রহমান কয়েকবার এই বার্ত দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ফলাফলও বিএনপিকে কঠিন বার্তা দিয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে দলটি আরও সতর্ক ও কঠোর হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এবার শতাধিক আসনে তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত পরিচিত হেভিওয়েট নেতারা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি যতটুকু জানি, সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন মাধ্যমে প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন, যোগ্যতা যাচাই করছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত ১৬-১৭ বছর ধরে যারা আন্দোলনে সক্রিয় ও আত্মনিবেদিত ছিলেন, তাদের প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। প্রার্থীকে অবশ্যই মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এমন প্রার্থীকেই দল মনোনয়ন দেবে। তবে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা এলাকায় কাজ করছেন, দলও তাদের পর্যবেক্ষণ করছে। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে, দলের তরফ থেকে এবং পেশাদার টিমের মাধ্যমে মাঠে কার কী অবস্থান, গ্রহণযোগ্যতা কেমন- এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার আলোকে যখন নির্বাচনি তফসিল দেওয়া হবে- তখন দল আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
মনোনয়ন পাওয়ার ক্রাইটেরিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, সমাজের কাছে এবং এলাকার মানুষের কাছে যিনি গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় তাকেই মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগ-তিতিক্ষা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা, মানুষের সঙ্গে তার যোগসূত্র তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি- সবকিছু বিশ্লেষণ করেই হবে। মূল কথা হচ্ছে- গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় ব্যক্তি মনোনয়ন পাবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলমান। তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও প্রতিটি এলাকার খবর রাখেন এবং একাধিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেন। এক আসনে একাধিক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, এক আসনে চার-পাঁচজন প্রার্থী হতে চান, তাদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা, এটাকে এক ধরনের স্পোর্টস বলা যায়। সেখানে ১০ জন অংশ নেয় কিন্তু প্রথম হয় একজন। এখানে বিএনপির প্রার্থী অনেকেই হবে। কারণ তারা সবাই আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেছে। জেল-জুলুম খেটেছে, কষ্ট করেছে। তাই প্রত্যেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে যে কোন প্রার্থীটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বেশি। যে জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি আসনে যোগ্য প্রার্থী আছেন, কিন্তু ভোট টানার সক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। ভালো কর্মী হলেও ভোট টানতে না পারলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তারেক রহমানের প্রতিনিধিরা সারা দেশে এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। স্থায়ী কমিটির অভিজ্ঞ সদস্যদের বিবেচনা করা হবে, তবে তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত- এটা এখন পর্যন্ত বলা কঠিন।