ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৯:২৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
* আইনের সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দল অব্যাহত রাখলে বিচারপ্রাপ্তিরা সুফল পাবে
* আইনে ১১ ধরনের মামলা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে
* এখন থেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ দায়িত্ব পালন করবেন
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিক নজরুল বলেছেন, লিগ্যাল এইডের জন্য ১১ রকম মামলার নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। মামলার জট কমাতে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঠিকভাবে এটি কার্যকর হলে মামলার জট কমার পাশাপাশি হয়রানি বন্ধ হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। তিনি কার্যক্রমকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ এ অন্তর্ভুক্ত মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বাধ্যতামূলক বিধান কার্যকর উপলক্ষে জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) শেখ আশফাকুর রহমান, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ হালিম উল্লাহ চৌধুরী, জিআইজেড এর প্রতিনিধি মার্টিনা বারকাড, জার্মান এ্যাম্বিসির প্রতিনিধি জেনিস হোসেইন। অনুষ্ঠানে বিচারক, আইনজীবী, বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে হনুফার হাসি নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, লিগ্যালে এইডের মাধ্যমে যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় প্রচলিত আদালতের বিরোধ নিষ্পত্তির চেয়ে ১০ ভাগের ১ ভাগ কম সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যদি আপনার ৫ বছর লাগে লিগ্যাল এইডে অফিসে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ৩/৬ মাস লাগে। লিগ্যাল এইডে অফিসে যে নিষ্পত্তি গুলো হয় সেখানে ৯৯% মানুষ খুশি হয়। যদি রাজনৈতিক দলগুলো এটা কন্টিনিউ করে তাহলে সাধারণ মানুষের আইন প্রাপ্তিতে অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হবে। সময় খরচ এবং ভোগান্তি কমবে। সেই সাথে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ কমে আসবে। লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে আরও ব্যাপক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাকসেস টু জাস্টিস ফর ইনহ্যান্সড প্রজেক্ট, (জিআইজেড)।
বক্তারা বলেন, এই যুগান্তকারী উদ্যোগ বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে এবং মামলার সংখ্যা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা স্বল্প সময়ে, নমনীয় খরচে এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ন্যায়বিচার লাভ করবেন।
লিগ্যাল এইডের নির্বাহী পরিচালক জানান, সারাদেশে ৫৪ লক্ষ মামলা রয়েছে। প্রতি বিচারকের কাধে প্রায় ২ হাজার মামলা। প্রতি বছর ৫ লাখ মামলা দায়ের হয়। প্রচলিত আদালতে নিষ্পত্তি হয় ৩ লাখ। বাকি ২ লাখ যদি লিগ্যাল এইডের সহায়তায় নিষ্পত্তি হয় তাহলে মামলার নিষ্পত্তির সমাতল চলে আসবে।
সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ হালিম উল্লাহ চৌধুরী জানান, ২০০৪ সালে ৩৬২টি এবং ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩৪২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের সম্প্রসারণ এবং অধিকতর গতিশীল, জনবান্ধব ও সহজলভ্য করতে গত ১ জুলাই ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করা হয়। এটি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তফসিলভুক্ত বিষয়গুলোর যেমন–পারিবারিক বিবাদ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, যৌতুক ইত্যাদি। দেশের ১২টি জেলার মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক বিধান ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এ মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার এক নব অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।