ব্রেকিং
স্পোর্টস প্রতিবেদক:
প্রকাশ: ১৫:০৮, ৩১ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০৯, ৩১ আগস্ট ২০২৫
সময় তখন দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিট! সাড়ে ১২ টা নাগাদ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তখন অবদি আসেননি নেদারল্যান্ডসের কেউই। অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশের সাংবাদিকরা খোঁজ নিতে সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে একটু এগিয়ে গেলেন। তখন বাংলাদেশের ক’জন সাংবাদিকের সঙ্গে গল্পে মজেছিলেন নেদারল্যান্ডসের মিডিয়া ম্যানেজার। কোরে রুটগার্স যখন সীমানার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন তখন অনুশীলনের জন্য ড্রেসিং রুম থেকে এক এক করে বেরিয়ে এলেন স্কট এডওয়ার্ডস, পল ভ্যান মিকেরিনরা।
সবার গন্তব্যই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গ্রাউন্ড। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে সেখানেই অনুশীলন করবেন স্কট এডওয়ার্ডসরা। সবাই যখন হেঁটে হেঁটে মাঠের দিকে যাচ্ছেন তখন পাশেই একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যস্ত ছিলেন মিকেরিন, কাইল ক্লেইন ও বিক্রমজিৎ সিং। তাদের থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ালেন নোয়া ক্রোস। অনুশীলনের আগেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার কথা ছিল তাঁর। সতীর্থদের সাক্ষাৎকার শেষ না হওয়ায় একটু অপেক্ষাই করতে হলো নোয়াকে।
ক্রিকেটাররা সবাই অনুশীলনের পথ ধরলেও আজকে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিলেন ম্যাক্স ও’ডাউড। সবার সঙ্গেই এলেন, তবে কিট ব্যাগ নয় ছোট একট পকেট ওজমো নিয়ে। সুযোগ পেয়ে সিলেটের সৌন্দর্য্য ভিডিও করে রাখছিলেন তিনি। গত কদিনে অবশ্য নিয়ে ঘুরেছেন রুটগার্স। মিনিট বিশেকের অপেক্ষা শেষে নোয়াকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে হাঁটা শুরু করলেন নেদারল্যান্ডসের মিডিয়া ম্যানেজার।
তাঁর সঙ্গে হাঁটতে থাকলেন নোয়া ও ম্যাক্স ও’ডাউড। স্বাভাবিকভাবেই মনে খটকা লাগার কথা। তবে কী দুজনই আজ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন? সেই সংশয় অবশ্য কেটেছে পরোক্ষণেই। রুমে যাওয়ার আগেই রুটগার্স জানালেন, সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের সঙ্গে আজ নোয়ার সংবাদ সম্মেলন কাভার করবেন ম্যাক্স ও’ডাউড। শুরুতে একটু রসিকতাই মনে হলো। তবে সত্যিকার অর্থেই সবার সঙ্গেই সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে হাঁটলেন তিনি।
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেই তখন পকেট থেকে মোবাইল বের করে ডাচ ব্যাটারের ছবি নেয়া শুরু করছেন। কেউ কেউ কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও নিয়ে রাখলেন। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে তখন প্রায় সবার চেয়ারই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দখলে। খুঁজে খুঁজে পেছনের দিকের একটা চেয়ার ফাঁকা পেয়ে হাসিমাখা মুখ নিয়ে বসলেন ম্যাক্স ও’ডাউড। বাংলাদেশের ক’জনের প্রশ্নের পর সুযোগ পেলে তিনি।
রুটগার্স যখন ম্যাক্স ও’ডাউডকে সুযোগ দিলেন তখন নোয়া বললেন, ‘ম্যাক্স, তোমাকে এখানে দেখে ভালো লাগছে।’ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ কাভার করতে নেদারল্যান্ডস থেকে কোনো সাংবাদিক আসেননি। স্বদেশের কোনো সাংবাদিক না আসার আক্ষেপটা হয়ত ক্রসের কেটেছে ম্যাক্স ও’ডাউড দেখে। সাংবাদিক ভূমিকায় আসা ম্যাক্স ও’ডাউড প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার টঙ্কার ডাকনামের গল্পটা বলবে? বেসবলের কথা উল্লেখ করে সেটা জানালেন ক্রোস।
একটা প্রশ্ন করেই থেমে থাকলেন না ম্যাক্স ও’ডাউড। কখন মোবাইল দিয়ে ছবি তুলছেন আবার কখনো পকেট ওজমো দিয়ে ভিডিও করে রাখছেন তিনি। শেষের দিকে এসে আরেকটা প্রশ্ন করার সুযোগ পেলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তখন তাঁর প্রশ্ন, ‘তোমার পছন্দের বাংলাদেশি ক্রিকেটার কে? প্রশ্ন শুনেই ক্রোস বললেন, ‘এটা ভালো প্রশ্ন।’ পাশাপাশি জানিয়েও রাখলেন নিজের পছন্দের বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নাম।
ক্রোস বলেন, ‘আসলে বেশ কিছু নাম আছে। কিন্তু আমি মনে করি ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুস্তাফিজুর রহমানকে যেভাবে খেলেছি...তাঁর মুখোমুখি হওয়া দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিল।’ সংবাদ সম্মেলন শেষের আগে ক্রোস এও বলে গেলেন, ‘আমি মনে করি তার দারুণ একটা ক্যারিয়ার হতে যাচ্ছে। সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই দক্ষ এবং আমি নিশ্চিত সে ভবিষ্যতে অনেকবার সামনে আসবে।’
ম্যাক্স ও’ডাউড কী ভবিষ্যতে সাংবাদিক হবেন? সেটা বলা অবশ্য কঠিন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনাটা প্রবল। নেদারল্যান্ডসের হয়ে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজারের বেশি রান করেছেন ৩১ বছর বয়সি এই ব্যাটার। ক্রিকেটে আসার আগে অবশ্য তরুণ বয়সে বিভিন্ন ক্লাবে অনিয়মিতভাবে ডিজের কাজও করেছেন তিনি। তবে ক্রিকেট ও ডিজেকে একসঙ্গে চালিয়ে নিতে না পারায় পছন্দের বাইশ গজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ক্রিকেটার, ডিজের পাশাপাশি ম্যাক্স ও’ডাউড একজন ইউটিউবারও।
২০০৯ সালের দিকে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একাউন্ট খোলেন তিনি। তবে প্রথমবার ভিডিও আপলোড করেছেন মাস দশেক আগে। মাঝে লম্বা একটা বিরতি দিলেও আবারও কাজ শুরু করেছেন। সিলেটে সিরিজে খেলতে আসার আগে ভ্লগও বানিয়েছেন তিনি। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘নতুন শুরু...।’ তাতে ধারণা করাই যাচ্ছে ক্রিকেট শেষে ক্যারিয়ারের নতুন পালক হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছে ইউটিউবিং। তবে ক্রিকেটার, ডিজে, ইউটিউবার ছাপিয়ে ম্যাক্স ও’ডাউড একদিনের জন্য পুরোদস্তুর সাংবাদিক হয়ে গেছেন।