সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি হলের নাম পরিবর্তন

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ৬ টি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন ও সংশোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড.মো. আসাদ উদ দৌলা  ১ জুন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

নতুন প্রশাসনিক আদেশে জানা যায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন ও ৩টি হলের নাম পুনর্বহাল  করা হয়েছে। 

ভেটেরিনারি কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন  নামকরণকৃত এম. সাইফুর রহমান হল, শহীদ জিয়া হল ও দুররে সামাদ রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে বিগত ফ্যাসিস্ট প্রশাসন শাহ এ এম এস কিবরিয়া হল,হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী হল ও সুহাসিনী দাস হল  নামে নতুন নাম করন করেছিল। 

বর্তমানে  ভেটেরিনারি কলেজ আমলের প্রতিষ্ঠিত নাম পুনর্বহাল করে তা আবার এম সাইফুর রহমান হল, শহীদ জিয়া হল ও দুরের সামাদ রহমান হল নামকরণ করা হয়েছে। 

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, আব্দুস সামাদ আজাদ হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে- হযরত শাহজালাল( র.) হল, জেনারেল এম. এ. জি ওসমানী হল ও সুহাসিনী দাস হল নামকরণ করা হয়েছে ।  

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উজ্জীবিত সিকৃবির  ছাত্র-ছাত্রীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহের নাম পরিবর্তন ও সংশোধনের লক্ষে গঠিত কমিটির সুপারিশক্রমে ও ৪৮ তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  হল সমুহের নাম পরিবর্তন ও সংশোধন সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

সিকৃবি ভিসির মন্তব্য:

এ প্রসঙ্গে সিকৃবি ভিসি ও সিন্ডিকেটের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.  মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কলেজ আমলের প্রতিষ্ঠিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে নামকরণকৃত হলসহ ভেটেরিনারি কলেজ ও সিকৃবির স্বপ্নদ্রষ্টা সাবেক সফল মন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিণীর নামে প্রতিষ্ঠিত হলের নাম পরিবর্তন করে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর তাদের  নামে প্রতিষ্ঠিত হলের নাম  পুনর্বহাল করা সহ ফ্যাসিস্ট সরকারের  সহযোগি ও দুর্নীতিবাজদের নামে নামকরণকৃত হল সমুহের নাম পরিবর্তন করে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নামে হলসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। 
এদিকে  সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের নাম পুনর্বহাল ও নতুন নামকরণে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

সিকৃবির হলের নাম পুনর্বহালে আরিফুল হক চৌধুরীর কৃতজ্ঞতা:

দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের হরণ করা নামকরণ ফিরিয়ে দেওয়ায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

রোববার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে প্রেরিত এক বার্তায় আরিফুল হক চৌধুরী এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরিত ধন্যবাদ বার্তায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট ভেটেরিনারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছিল ২০০৬ সালে বিগত বিএনপি সরকার আমলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিলেট বিভাগের রূপকার এম সাইফুর রহমান। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, এম সাইফুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী দুররে সামাদ রহমানের নামে তিনটি আবাসিক হলের নামকরণ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ফ্যাসিস্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশে অকৃতজ্ঞের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের নাম মুছে ফেলতে অযাচিতভাবে নামকরণ করে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন অনুরাগীদের আহবানে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে দেওয়া হলে ৪৮তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদন হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ তম সিন্ডিকেট সভায় ফ্যাসিবাদী শাসনের চিহ্ন মুছে ফেলতে নতুন নামকরণে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, হরণ করা নামকরণ ফেরানোর সিদ্ধান্তের সাথে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর নামে আবাসিক হলের নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সিন্ডকেট সভাকে অভিনন্দন জানাই। 

পাশাপাশি যে সকল প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নামকরণ হরণ করা হয়েছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে সিলেট বিভাগের যে উন্নয়ন হয়েছে, যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে, উন্নয়ন কাঠামোর ব্যাপক বিস্তৃত ঘটেছে, তা আড়াল করতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হরণ করে। আমি ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি যোগাযোগ করে পূর্বের নামকরণ ফেরানোর আহবান জানিয়েছি। ফ্যাসিস্টদের হরণ করা নামকরণ ফিরিয়ে দিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করার আহবান জানাচ্ছি।