ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৫:৫১, ১ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৫৩, ১ জুন ২০২৫
* দুর্ঘটনাস্হল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক, ৫০ হাজার টাকা অনুদান
*ভারতীয় ঢলে নদীতে পানি বাড়ছে, জকিগঞ্জে বিপদসীমার উপরে
ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে বসতঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপায় একই পরিবারের চার জন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ৭নং লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ার ঘাট গ্রামে শনিবার দিবাগত গভীর রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- বখতিয়ার ঘাটের রিয়াজ উদ্দিন (৫০), তার দ্বিতিয় স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৪), মেয়ে সামিয়া খাতুন (১৫) ও আব্বাস উদ্দিন (১৩)।
প্রথমেই খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খলকুর রহমানসহ এলাকাবাসী ছুটে যান। তারা প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা করেন কিন্তু বৃষ্টির কারনে তা সম্ভব হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়।চেয়ারম্যান জানান, স্ত্রী ও দুই শিশু নিয়ে ইয়াজ উদ্দিন ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণের সময় হঠাৎ তার আধাপাকা ঘরের ওপর টিলা ধসে পড়ে। এতে তারা চারজন চাপা পড়ে মারা যান।
রোববার (১ জুন) সকাল ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশের চার ঘন্টার যৌথ প্রচেষ্ঠায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ টিলা ধসে একই পরিবারের চার জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকাল ১০ টার দিকে গোলাপগঞ্জের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান দু' দিন থেকে সতর্ক করার পরও ওই পরিবার সরে না যাওয়ায় বখতিয়ার ঘাটে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের চার জন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। ওই টিলা নাকি অনেক বড়। ওরা হয়তো মনে করেছে নিরাপদ আছে। এজন্য সরেনি মনে হয়।
তিনি জানান, তাদের দাফন কাপনের ব্যবস্হা করা হয়েছে। নিহত রিয়াজ উদ্দিননের প্রথম স্ত্রীর এক পুত্র ও কণ্যর রয়েছে। পুত্রের কাছে তাৎক্ষনিক অনুদানের ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে আরেি সহযোগিতা করা কবে।
জেলা প্রশাসক জানান, ওই উপজেলার তিনটি জায়গায় টিলা ধস হয়েছে। বাকি দুই জায়গা কাছাকাছিই, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আর শনিবার সিলেট সদরের এক জায়গায় হাল্কা টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। পরে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। মাইকিং দু'দিন ধরে করা হচ্ছে।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ জানান, 'নিহতদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, এটা ন্যাচারাল ক্যালামিটি। তারা ময়নাতদন্ত করাবেন না। এখানে এভাবেই দাফন-কাফন করবেন। তাদের এটার প্রতি সম্মান রেখে বাকি আইনী প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে। বাদ আসর নিহতের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।'
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, টিলা ধসের খবরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এ ঘটনায় দুই সন্তানসহ বাবা ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ আরো জানান, 'ঢাকাদক্ষিণ বাজারে জলাবদ্ধতা ও রাখালগঞ্জ বাজারে বড় গাছ রাস্তার উপর পড়ে রাস্তা বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টা পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে।গত দু'দিন ধরেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। রোববার সকাল থেকে প্রত্যেকটি মসজিদেও মাইকিং করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার-গ্রাম পুলিশের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ এলাকার লোকজনকে আগে থেকেই প্রস্তুত করা আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে।'
জকিগঞ্জে বিপদসীমার ১.২৩ মিমি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে
জেলা প্রশাসক সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্হিতি ব্যাপরে জানান, ' ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তবে এখনো বিপদ সীমার নিচেই আছে। শুধু জকিগঞ্জে বিপদসীমার ১.২৩ মিমি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বন্যা সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্ততি রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৮৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র সহ শোকনো খাবার ও গো-খাদ্য প্রস্তুত রয়েছে। ওসমানী নগর উপজেলায় ৩টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি।'