ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৬:১০, ৭ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৬:১৩, ৭ জুলাই ২০২৫
* ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অন্তবর্তী সরকার নির্বাচনের আয়োজন করবে বলে আশাবাদী
* সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে
* সিলেট আমাদের কাছে প্রিয় কারণ তা তারেক রহমান সাহেবের শ্বশুর বাড়ি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ’মানুষের কাছে যান, মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই’।
তিনি বলেন, নির্বাচনে যতই দেরি হবে বাংলাদেশ ততই পেছাবে। দেশে বিচার ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসবে, সামাজিক নিরাপত্তা হবে বিঘ্নিত, জুডিশিয়াল ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সেই জন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার। যেই সরকারের পেছনে থাকবে জনগণ।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরীর পাঠানটুলায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা লড়াই করছি ভোটের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছি ঠিকই কিন্তু গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাজ এখনো চলমান। নতুন করে আমরা সংগ্রাম শুরু করলাম তরুণ নেতা তারেক রহমানকে সামনে রেখে। আমাদের একটাই কথা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতেই চাই। যা বিএনপির ৩১ দফাতেই দেশের ভবিষ্যৎ।
এসময় তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এই জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।’তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ রাইট ট্র্যাকে উঠবে, জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে। নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দেশের সঠিক পথে অগ্রযাত্রা সম্ভব। ছাত্র-জনতার আন্দোলন, বিশেষ করে জুলাইয়ের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থান, যে নতুন পথ দেখিয়েছে তা সবাইকে বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এসময় তিনি দাবি করেন, দেশে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হাজারও প্রাণহানী ঘটেছে।
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর পূর্বে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মহান সাধকের দরগায় আমরা আসি। শুধু আমরা নই, দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন।
তিনি বলেন, এটা আমাদের পূণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরো প্রিয় আরেকটা কারণ আছে তা হচ্ছে আমাদের নেতা তারেকে রহমান সাহেবের শ্বশুর বাড়ি। সেই জন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই। এসময় তিনি ইলিয়াস আলীসহ সকল গুম হওয়া সকল নেতাদের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায় নাই, বহু মানুষের সংগ্রাম, রক্ত, ত্যাগ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম। আমরা তো লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, মহিলারা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরীর জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরমার্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেই দল সেই যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছে। শহীদ জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই দেশ আমরা গড়তে চাই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেউ যাতে আঙ্গুল তুলে না বলতে পারে আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।’এসময় তিনি বলেন, সিলেটের যেই মাঠে বেগম জিয়া সমাবেশ করেছিলেন আগামী সেখানে তারেক রহমানকে নিয়ে দেখা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী, ড. এনামুল হক চৌধুরী, ডা: সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও মিফতাহ্ সিদ্দিকী।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান মিজান ও এডভোকেট হাদীয়া চৌধুরী মুন্নী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী।
মির্জা আব্বাস
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যই গ্রেফতার করা হয়েছিলো। মামলাটি ছিল অজুহাত, তাকে স্লো পয়জনিং করে তাকে মেরে ফেলতেই এই নাটক সাজিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, হাসিনা চলে গেছে তার দোসররা দেশেই আছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তারা আছে। তারা ভোট চায় না। নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, একটি দল একবার বলছে নির্বাচন হবে, আবার বলছে পরিবেশ নাই, আবার বলছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। তিনি মনে করেন পিআর কি তারাও ঠিক মতো জানে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের ৮০টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে আছে তা ৮০ রকম। তাদেরকে পিআর নিয়ে পড়াশুনা করত বলবো। তিনি বলেন, ১৭ বছরের আন্দোলন সফল করতে দিতে চায় না। তিনি বলেন, ১৭ বছর ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। নির্বাচন নিয়ে টালবাহনা করলে আবারো আন্দোলনে যাবে প্রয়োজনে। আওয়ামী আমলাদের সব বাধাবিপত্তি এবং ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে নির্বাচন আদায় করে ছাড়বে বিএনপি।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
বিশেষ অতিথি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু তাঁর বক্তব্যে বলেন, হায়েনামুক্ত হয়েছি, কিন্তু ষড়যন্ত্র মুক্ত হইনি। সবাই মিলে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা আলবদর রাজাকার বাহিনী গড়ে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে, তারা আজ একেক সময় একেক কথা বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।