ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৪:০৪, ৪ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩০, ৪ মে ২০২৫
ছবি: এইচ এম শহীদুল ইসলাম
বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিলেটের ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন চা-শ্রমিকরা। রোববার (৪ মে) দুপুর দেড়টার দিকে সিলেটের খাসদবির এলাকা সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের প্রবেশদ্বারে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকরা। গত ২০ সপ্তাহ ধরে বেতন পাচ্ছেন না চা বাগানের প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক।
জানা যায়, বকেয়া বেতন, বোনাস ও রেশন পরিশোধ, বসত বাড়ি নির্মাণ ও মেরামত, চিকিৎসা সেবা চালু ও ঔষধ প্রদান, চা বাগানের গাছ কাটা ও বিক্রি বন্ধসহ বেশ কযেকটি দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন চা শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ শুরু করেন শ্রমিকেরা। অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে সিলেটের বুরজান চা-কোম্পানির অধীনস্থ তিনটি চা বাগান বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল ও বুরজান কারখানার শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। ফলে এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার মানবতের জীবন যাপন করছেন।
প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেটের কালাগুল চা বাগানে কাজ করছেন জাসদা বাউড়ি। তিনি জানান, যখন প্রথম কাজ শুরু করি, তখন দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ছয় টাকা। বছরের পর বছর ধরে, তার মজুরি এবং রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এতোদিনের কাজে কখনো ২০ সপ্তাহ বেতন না পাওয়ার মতো সংকটের মুখোমুখি হয়নি।
তিনি বলেন, ‘দুল উৎসবের জন্য আমরা কোনো বোনাস পাইনি। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম, আশ্বাস পেয়েছিলাম কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বৃহস্পতিবার মে দিবস ছিল, ওইদিনও আমি আমার মজুরি বা কোনো বোনাস পাইনি।’
বুরজান চা বাগানের বৃদ্ধ শ্রমিক জোসনা বেগম বলেন, এবার ঈদের আগে বকেয়া মজুরির দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমার, এমনটি কখনও ঘটেনি। এমনকি, রমজানে মজুরি না পেয়ে সঠিকভাবে ইফতারও দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা আবার ঘনিয়ে আসছে। গত ঈদে আমরা কিছুই কিনতে পারিনি। আমি আমার বাচ্চাদের সামনে যেতে পারিনি শরমে ও অভাবের কারণে। আমরা খাবার ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমরা আর কতক্ষণ সহ্য করবো?’
কালাগুলের চা শ্রমিক নেতা সোহাগ ছত্রী বলেন, ‘আমাদের বারবার বলা হচ্ছে যে আমাদের ‘আজ অথবা কাল’ বেতন দেওয়া হবে, কিন্তু তা কখনও হয় না। আমরা যখন অনাহারে থাকি তখন বাগান মালিকরা বিদেশে ভ্রমণ করেন।’
চা শ্রমিক ও চা-বাগান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রঞ্জিত নায়েক রঞ্জু বলেন, ‘বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও, কেউ তাদের কথা রাখেনি। আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু একটিও পূরণ হয়নি। তাই, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আমরা আজ মালনীছড়ায় সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করি।’
এ ব্যাপারে বুরজান চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেছি আমরা। এখনও ঋণ পাইনি, পেলে শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, কেবল শ্রমিকরা নয়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও তাদের বেতন পাননি, কারণ বাগানগুলো লোকসানের মধ্যে আছে। তাই বেতন দিতে পারছে না।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২,৬০০ শ্রমিকের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় এবং চা বোর্ডের সঙ্গে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেছি।’