ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৯:২২, ৫ জুন ২০২৫
ছবি-সংগৃহীত
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে আবারও মরণঘাতি করোনা ভাইরাস। এই আতঙ্কজনক খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন লোকজন। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে পাশের দেশের করোনার খবরে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের সাথে বিশাল সীমান্ত ঘেরা ভারত। প্রায় দেড় মাস থেকে বিএসএফ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনকে উঠিয়ে এনে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তে দিয়ে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। ফলে সিলেটের জন্য এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগও ভারতের করোনা ভাইরাসের খবরে নড়েচড়ে বসেছে। দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে কী করণীয় নির্ধারণে বুধবার (৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত জুম মিটিংয়ে অংশ নেন সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান। মিটিংয়ে তিনি সিলেটের বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করেছেন। তিনি জানান, এই মুহুর্তে সিলেটে করোনা ভাইরাস নির্ণয়ে ডায়াগনস্টিক কিট অর্থাৎ রি-এজেন্ট (রাসায়নিক উপাদান) কিট এর কোনো মজুদ নেই। করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে। সেখানে রি-এজেন্ট (কিট) শেষ হয়ে গেছে। যেহেতু এখন জুন মাস তাই নতুন করে এগুলো আমদানি করতেও সময় লাগবে। তবে ভ্যাকসিনের মজুদ রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া যেখানে যেসব আরটি-পিসিআর আছে তা চালু করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। উপজেলা পর্যায়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সিলেটে এখনো করোনা সংক্রমণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত: দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে জনমনে দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন শনাক্ত হয়েছে ১৫ জনের করোনা।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ সরকারি ছুটি। এই অবস্থায় প্রাণঘাতি করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত হবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের, তা নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এই মুহুর্তে কাউকে আতংকিত না হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, সিলেট অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঈদে স্বাস্থ্যসেবা নির্বিঘ্ন রাখতে দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।
তিনি জানান, সিলেটে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত না হলেও প্রবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রতিপালনে তারা ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মনিটরিং করবেন। তিনি আরো জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, চিকিৎসা একটি জরুরি সেবা। এটা বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওসমানী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সেবা ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে। ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি থাকলেও ৫ ও ৯ জুন আউটডোরে দুই ঘণ্টা করে রোগী দেখা হবে। এছাড়া, ছুটির দিনগুলোতে চিকিৎসক এবং নার্সরা রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে করোনা ভাইরাস। জানা যায়, দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ক্রমেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে সংক্রমিত করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ভারত থেকে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী আশপাশের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। কেননা, ভারতে শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন পর থেকে বাংলাদেশেও শনাক্ত হচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।