ব্রেকিং
খালেদ আহমদ, সিলেট*
প্রকাশ: ২১:৫৮, ১৪ জুন ২০২৫
প্রাকৃতি কন্যা জাফলং ইসিএ (ইকোলজিক্যাল ক্রিটিকাল এরিয়া) পরিদর্শনে এসে স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন দুই উপদেষ্টা। তারা হলেন-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
স্হানীয়রা জানান, শনিবার সকালে জাফলং পরিদর্শনে যান দুই উপদেষ্টা। ফেরার পথে জাফলং বল্লাঘাট (মামার দোকান) এলাকায় স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন উপদেষ্টা।
এদিকে, জাফলংয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ার কারণে ভোলাগজ্ঞেও পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে মুখোমূখি হওয়ার আশংকায় সাদাপাথর পর্যটন স্পট পরিদর্শন বাতিল করে ঢাকায় ফিরে যান দুই উপদেষ্টা । এর আগে বিকেলে সিলেট সার্কিট কাউসে কর্মকর্তদের সাথে বৈঠক করেন।
এদিকে, শনিবার (১৪ জুন) সকাল ১১ টায় জাফলং বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টার থেকে স্পিডবোট যোগে উপদেষ্টাবৃন্দ জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে ১২ টায় জাফলং বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টার মাঠে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে ‘জাফলংসহ সিলেটের আর কোন পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া হবে না’ - দুই উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্যবসায়ি, শ্রমিক-জনতা। তারা জাফলংসহ সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
এসময় তারা দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর ঘিরে সড়ক অবরোধ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ শ্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন এবং দুই উপদেষ্টার গাড়ি চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন জাফলং ইসিএ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম অবৈধ কার্যক্রমের সাথে কেউ জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাদত হোসেন জানান, পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা পরিবেশ ঠিক রেখে পাথর উত্তোলনের ওপর জোর দেন। ফেরার পথে তাদের গাড়ি বহর স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত করে।
পরিবেশবান্ধব পর্যটন উন্নয়নে সিলেটে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সিলেটের জাফলংসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় পরিবেশবান্ধব ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শনিবার সিলেটের জাফলং এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মহাপরিকল্পনায় পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা প্রাধান্য পাবে।তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ যৌথভাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন জাফলংয়ের মতো এলাকায় পাথর উত্তোলনের জন্য আর ইজারা দেওয়া হবে না। এর পরিবর্তে এই সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এলাকাগুলোতে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের কৌশল নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। অতিরিক্ত পাথর ও বালু উত্তোলনে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ডেলেপমেন্ট করলে লন্ডনের থেকে বেশি টাকা আসবে: খনিজ উপদেষ্টা
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এখানকার স্টোন ক্রাশারগুলো অপসারণ করা হবে। অবৈধভাবে কাউকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকবে। এখানে যে ক্রাশার মেশিন আছে সেগুলো সরাতে হবে। এজন্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
সিলেটের যে পর্যটনকেন্দ্র গুলো আছে এই গুলো ডেলেপমেন্ট করলে সিলেটে যে লন্ডন থেকে টাকা আসে তার থেকে বেশি টাকা আসবে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে আমরা কোনদিকে যাবো? পাথর উত্তোলন করে কি ধ্বংসের দিকে যাবো নাকি এটা পরিবেশগত সৃষ্টি করে বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। সিলেটের সকল পর্যটন নিয়ে সামগ্রীক উন্নয়ন নিয়ে একটি পরিকল্পনা করবো।
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির ও পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার তোফায়েলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এর আগে উপদেষ্টাদ্বয় স্পিডবোট যোগে জাফলংয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন। তাঁরা জাফলং স্টোন মিউজিয়াম ও হরিপুর রেস্ট হাউজে গাছের চারা রোপণও করেন।