ব্রেকিং
স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকাশ: ১৫:১০, ১১ জুন ২০২৫
সিলেটের সীমান্তের কোম্পানিগজ্ঞের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাথর কোয়ারি 'উৎমা ছড়া'য় পর্যটক যাওয়া-আসা নিয়ে স্থানীয় আলেম- ওলামাদের বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ঈদের ছুটিতে সাদাপাথর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বের নিরিবিলি উৎমা ছড়া ভিড় করেন। সংক্ষিপ্ত পোশাক পড়ে তারা নাচ গান গোসল করেন। যা ওই এলাকাবাসীর কাছে দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। তাই এলাকাবাসী সেখানে না যাওয়ার জন্য ২/১ থেকে নিষেধ করেছেন।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ বলছেন এটি পর্যটনকেন্দ্র না, এখানে এসে বাহিরের মানুষজন বেহায়াপনা করে আর মাদক সেবন করে। আর কেউ বলছেন এখানকার সীমান্তবর্তী চোরাচালান, মাদক ও ছড়ার পাথর লুট করতেই পর্যটনকেন্দ্রে মানুষজনকে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উৎমা ছড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি উপজেলার একেবারে সীমান্ত এলাকার জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। কালো কালো পাথরের মধ্যে দিয়ে মেঘালয়ের পাহাড় ঘেষে আসা ঠান্ডা পানি দেখতে ও সেখানে গা ভেজাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পর্যটকেরা। তবে পর্যাপ্ত রাস্তা ও পরিচিতির অভাবে এটি লোকচক্কুর আড়ালে রয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরে।
মূলত উৎমা একটি কোয়ারী এলাকা ছিল। এই ছড়া দিয়ে ভারত থেকে পাথর আসতো আর সেটা বিক্রি করে স্থানীয়রা জীবিকা নির্বাহ করতো। গত কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সেখানে পাথর জমে সৌন্দর্য বেড়েছে। ফলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই পর্যটকেরা সেখানে যাচ্ছেন আর সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে সেটা প্রচার হচ্ছে।
ঈদের আগের দিন গেল শুক্রবার ওই এলাকার তৌহিদী জনতা বসে মিটিং করে উৎমাছড়া, কুলি (তুরুং) ছড়ায় পর্যটকদের যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণের ঘোষণা দেন ফেসবুকে। তারা ঈদ উপলক্ষে উৎমাছড়া ও কুলি (তুরুং) ছড়ায় কোন ধরনের পর্যটকদের না আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
কিন্তু পবিত্র ঈদুল আজহার দিন থেকেই পর্যটকেরা ছুটেন উৎমা ও তুরুং ছড়া এলাকায়। এর পরদিন (রোববার) বিকেলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা ও আলেম-ওলামারা সেখানে গিয়ে পর্যটকদের উৎমা ছড়া থেকে উঠে আসার জন্য বলেন ও সেখানে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয় আর সেটি থেকেই শুরু হয় এর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা যায় একজন বলছেন, এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমা ছড়াকে পর্যটন এলাকা করা যাবে না। এটি একটি ছড়া, কোনো পর্যটন স্পট না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
এলাকার লোকজন বলেন, আপনাদের মতো অনেকেই এখানে এসে মদ্যপান করে অশ্লীল কার্যকলাপ করে, যার ফলে আমাদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি।
তারা জানান, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের উলামায়ে কেরাম মুরুব্বি ও যুব সমাজ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে উৎমাছড়া এলাকায় পর্যটনের নামে কেউ আসতে পারবে না। আপনাদেরকে আমরা সম্মানের সাথে অনুরোধ করে বলছি আগামীতে কোনদিন আপনারা এখানে আসবেন না এবং আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন সবাইকে জানিয়ে দিবেন উৎমা ছড়াকে পর্যটন হিসাবে বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত দুদিন থেকে এটাই সীমান্তে আলোচ্যবিষয়।
এদিকে, মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের সাথে এলাকাবাসী বৈঠক করে জানান যে, এটা মূলত বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও মাদক সেবন না করতে অনুরোধ করেছেন। এটাকে ঘোলাটে করা হচ্ছে।
পরে তারা প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেন যে, উৎমায় মানুষজন ঘুরতে আসলে তাদের কোনো সমস্যা নেই। শুধু বেহায়াপনা ও মাদক সেবন করতে পারবে না।
এবিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা, যুব জমিয়ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমিন সিরাজী বলেন, আমরা এখানে কাউকে আসতে নিষেধ করিনি। আমরা শুধু বলেছি যে, এখানে এসে কেউ যেন মাদক সেবন না করে ও অশ্লীলতা না করে। আর এই ছড়ায় আসতে সরাসরি কোনো রাস্তা নেই। এখানে আসতে হয় অনেকের বাড়ির উঠোনে দিয়ে। যার কারণে স্থানীয় মানুষজন নানা সমস্যায় পড়েন। একারণে আমরা জাস্ট তাদের এখানে এরকম অনৈতিক কাজ না করতে নিষেধ করেছি। ভিডিওতে আমাদের এখানকার একজন বলে ফেলছেন যে এখানে আর আসবেন না। একারণে মূলত সমস্যাটা হয়েছে। আমরা ইউএনও মহোদয়ের সাথে বসে এটার সমাধান করেছি।
শফি উদ্দিন জুয়েল নামে স্থানীয় এক পর্যটক জানান, উৎমা ছড়া কারো ব্যক্তিগত সম্পদ না। মাদক বা বেহায়াপনা হলে সেটা বন্ধ করুন। এতে আমাদের আপত্তি নাই। আর মাদক আপনাদের এলাকার লোক বিক্রি করে। পারলে মাদকের দোকান বন্ধ করুন। পর্যটক এবং পর্যটনকে পজিটিভলি নিন। ইউনিক ব্যবসা করুন। রাস্তায় সাইনবোর্ড লাগান ভদ্র শালিন পোষাক ছাড়া উৎমা ছড়ায় যাওয়া যাবে না। আমার ধারণা- উৎমা ছডায় যাতায়াত বন্ধ মানে পাথর লুটপাটে সুবিধা হওয়া।
এবিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, তাদের সাথে আমরা বসেছি। আমরা সকলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে জানিয়েছি যে, আপনারা এটা করে কি পাথর চুরিটাকে প্রমোট করতেছেন কি না? তো তারা বলছে যে, তারা ইসলামের দাওয়াত দিয়েছে। তাদের সাথে এটার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।