ব্রেকিং
এইচ এম শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৫:২৬, ১৯ আগস্ট ২০২৫
ছবি: এইচ এম শহীদুল ইসলাম
ইট-পাথরের কোলাহল আর ধোঁয়াটে নগরজীবনের মাঝে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ যেন পরিণত হয়েছে সবুজের এক স্বর্গভূমিতে। ফল, ফুল, বনজ, ঔষধি ও শোভা বর্ধনকারী গাছের সুবাসে মুখরিত এই মাঠ এখন গাছপ্রেমী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে।
১৫ দিনব্যাপী এই বিভাগীয় বৃক্ষমেলার অর্ধেক পথ অতিক্রান্ত হলেও, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগ্রহ যেন প্রতিদিনই বাড়ছে। শহরের ইট-পাথরের ভিড়ে এই মেলা যেন এক টুকরো প্রাণের ছোঁয়া, এক স্বপ্নিল সবুজ রাজ্য।
সিলেট জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের উদ্যোগে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ৯ আগস্ট শুরু হওয়া পক্ষকালব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান ও সিলেট বিভাগীয় বৃক্ষমেলায় ৫৬টি স্টলে সাজানো হয়েছে নয়নকাড়া হাজারো প্রজাতির বৃক্ষ।
বন বিভাগের কৃতিম টিলা বেষ্টিত আকর্ষণীয় স্টলসহ ৫৬টি স্টলে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারস, কমলা, আমলকি, পেঁপে, পেয়ারা, তেঁতুল, ড্রাগন ফল, মাল্টা, লটকনসহ নানা ধরনের ফলজ গাছ। ফুলের স্টলে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, টগর, গাঁদা, বেলী, বাগানবিলাস, দোলনচাঁপা, অর্কিড, ডালিয়া, সূর্যমুখী এবং আরও অসংখ্য ফুলের চারা। বনজ গাছের মধ্যে রয়েছে মেহগনি, সেগুন, আকাশমণি, কড়ই, বট, অশ্বত্থসহ দামী কাঠের চারা। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে তুলসি, অ্যালোভেরা, নিম, অশোক, গন্ধরাজ, গুড়হাল, বাসক এবং হারবাল উদ্ভিদের চারা।
হাউস ডেকোরেশনের জন্য রয়েছে বনসাই, ইনডোর প্ল্যান্ট, মানিপ্লান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, সাকুলেন্ট, এয়ার প্ল্যান্টসহ আকর্ষণীয় সব গাছ।
চারপাশের ব্যস্ত নগরের কোলাহলের মধ্যে এই মাঠ যেন পরিণত হয়েছে এক সবুজ অভয়ারণ্যে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা মুগ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে। কেউ ক্যামেরাবন্দি করছেন পছন্দের গাছ, কেউ আবার সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন এই সবুজ আনন্দের মুহূর্ত। দর্শনার্থীদের জন্য ফুসকা, আচার, চটপটি সহ আরও অনেক আয়োজন রয়েছে।
ছুটির দিনে মেলায় ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসে গাছ কিনছেন, বাগান সাজানোর পরিকল্পনা করছেন।
মেলার আয়োজকরা জানালেন, বৃক্ষরোপণ শুধু শখ নয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশ রক্ষায় এটি একটি জরুরি উদ্যোগ।
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ঘুরতে আসা এক নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী জানান, “বৃক্ষ না থাকলে মানুষও থাকবে না। মানুষ জীবিত থাকতে চাইলে গাছ লাগানো এবং যত্ন নিতে হবে।”
পরিবেশকর্মী শাহ সিকান্দার শাকির জানান, “অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই মেলায় আসা দর্শনার্থীরা গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হবে। তবে মেলায় অংশ নেওয়া নার্সারী মালিকদের জন্য দাম কিছুটা বেশি, তবুও ভালো উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
সিলেট নার্সারী মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট নার্সারীর পরিচালক মলয় লাল ধর বলেন, “আগের তুলনায় শহরে গাছ লাগানোর জায়গা কমছে, তাই বিক্রি কিছুটা কম। কিন্তু ছাদবাগানে যেসব গাছ লাগানো যায়, সেসব বিক্রি বেশি হচ্ছে। মেলার আয়োজন সফল করতে সমিতির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।”
মেলার একটি স্টলে রাখা হয়েছে বিরল প্রজাতির অর্কিড, যা অনেক দর্শনার্থীর কাছে মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। অন্যদিকে বনসাই কর্নারে ছোট্ট টবের ভেতর বিশাল বৃক্ষের রূপ মুগ্ধ করছে গাছপ্রেমীদের।
সিলেটের এই বৃক্ষমেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি যেন শহরের হৃদয়ে সবুজের উৎসব, যেখানে গাছের পাতায় পাতায় লেখা আছে জীবন ও ভালোবাসার বার্তা।
শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চারা বিতরণের আয়োজন রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবুজের গুরুত্ব বোঝাতে সহায়ক হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে বৃক্ষমেলা। মেলা চলবে আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।